স্বপ্নগুলো
লেখাঃ সাদিয়া রহমান দৃষ্টি
বয়স তখন অল্প ছিল
স্বপ্ন ছিল কত,
জীবন টাকে রাঙিয়ে নেব
নিজের মনের মতো।
এটা করবো, সেটা করবো
বাড়ি করবো পাহাড় চূড়ায়,
চারপাশটা সাজিয়ে নেব
ফুল পাখি আর তারায় তারায়।
বিকেল হলেই পা ভেজাতে
ছুটবো সাগর বেলায়,
সন্ধ্যে হলেই আঁকবো ছবি
প্রজাপতির পাখায়।
চন্দ্র এসে ঘুম পাড়াবে
রাত্রি যখন হবে,
পাহাড়ি এক বাঁশির সুর
ঘুম ভাঙিয়ে যাবে।
খুঁজবো আমি সকাল হতেই
কোথায় বাঁশির সুর?
আসবে এক রাজার ছেলে
হতে অচিনপুর।
একহাতে তার সোনার কাঠি
আরেক হাতে বাশি,
মিষ্টি হেসে বলবে সে
তোমায় ভালবাসি।
অচেনা হাত, অজানা পথ
তবু দিলাম পাড়ি,
তার স্বপ্নই দেখি এখন
আমার স্বপ্নে আড়ি।
ভুলে গেছি স্বপ্ন দেখা
হাজার কাজের চাপে,
এটা হয়নি, ওটা মন্দ
লবনটা দিও মেপে।
রাজকন্যা ছিলাম আমি
আমার বাবার কাছে,
সহানুভূতি খুঁজি এখন
আজব সংসার মাঝে।
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে
হঠাৎ অবসরে,
উঁকি দিলে স্বপ্নগুলো
ভীষণ অচেনা লাগে।
এখন আমি গৃহিনী
এখন আমি মা,
এখন শুধু কর্তব্য
আর স্বপ্ন দেখিনা।
তবু আমি ভালো আছি
আমরা সকলে মিলে,
উড়িয়ে দিলাম স্বপ্নগুলো
আকাশ ভরা নীলে।
খোকার মধুমাখা শৈশব থেকে কৈশর।
লেখাঃ সাদিয়া রহমান দৃষ্টি
সেদিনের সেই ছোট্ট খোকা, আজকের জাতির পিতা। এই মহামানবের আবির্ভাব কিন্তু কোন বিখ্যাত শহর কিংবা খ্যাতিসম্পন্ন বন্দরে হয়নি। বরং তার আবির্ভাব হয়েছিল সবুজের ছায়াঘেরা বাংলার এক নিভৃত পল্লীতে।গ্রাম বাংলার চিরায়ত সবুজ, বয়ে চলা নদী, হিজলের বন, পাখির কিচিরমিচির, নদীর কলকল ধ্বনি আর ভেজা বাতাস সব মিলিয়ে শান্ত স্নিগ্ধ আর নিরিবিলি পরিবেশ। বলছি সেই বিখ্যাত টুঙ্গিপাড়ার কথা, যা মধ্যবঙ্গের ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমায় (বর্তমান জেলা) অবস্থিত। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই মার্চ (৩ রা চৈত্র, ১৩২৭ বঙ্গাব্দ) টুঙ্গিপাড়ার এক বনেদী পরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান জন্মগ্রহন করেন। দিনটি ছিল বুধবার।
গর্বিত পিতা শেখ লুৎফর রহমান এবং রত্নগর্ভা মাতা সায়েরা খাতুনের অত্যন্ত আদরের সন্তান তিনি। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।তার ডাকনাম ছিল খোকা। আকীকার সময় মাতামহ- শেখ আব্দুল মজিদ তাঁর নাম রেখেছিলেন শেখ মুজিবর রহমান। সে সময় তিনি তার কন্যা সায়েরা খাতুনকে বলেছিলেন, ছেলের এমন নাম রাখলাম, যে নাম জগৎ জুড়ে বিখ্যাত হবে। যা পরবর্তীতে সত্য প্রমাণিত হয়েছিল।
শেখ মুজিবের পিতা শেখ লুৎফর রহমান এর পড়াশোনা ছিল এন্ট্রান্স পর্যন্ত। তিনি পেশায় একজন সেরেস্তাদার, ব্রিটিশ ভারতের গোপালগঞ্জ দেওয়ানী আদালতের নথি সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা ছিলেন। একই সাথে সরকারি চাকুরী এবং পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত শতাধিক বিঘা জমি থাকার ফলে পারিবারিক জীবন বেশ স্বচ্ছল ছিল। তিনি ছিলেন শেখ মুজিবের সবচেয়ে ভাল বন্ধু৷ ছেলেকে কোন কাজে তিনি বাঁধা দিতেননা। মূলত তাঁর হাতেই শেখ মুজিবের পড়াশোনার হাতে খড়ি। শেখ মুজিব একটু বড় হতেই তিনি তাঁকে আস্তে আস্তে আরবি, বাংলা, ইংরেজি, ফারসি, অংক পড়াতে শুরু করলেন৷ শেখ মুজিবের সবকিছু নিয়ে অনেক জানার আগ্রহ ছিল। শেখ মুজিব সবসময়ই বাবাকে নানা প্রশ্ন করতেন এবং তিনি কোন রকম বিরক্ত ছাড়া সবকিছুর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতেন। তিনি ছেলেকে অনেক অনেক বই কিনে দিতেন। ইতিহাস, সাহিত্য, ধর্ম, দর্শন, ভূগোল, বিজ্ঞান, বড় বড় মনীষীদের জীবনী, ব্রিটিশদের অত্যাচার সহ নানা বই। তিনি নিজেই ছেলেকে পড়ে শোনাতেন বইগুলো।
একান্নবর্তী পরিবারে শেখ মুজিব সবার আদরে একোল -ওকোল করে শিশুকাল পার করেছিল। ছোটবেলা থেকেই আর পাঁচটা গ্রামীন ছেলের মতোই তিনি বেড়ে উঠেছেন। টুঙ্গিপাড়ার শ্যামল পরিবেশে শেখ মুজিবের মধুমাখা শৈশব কেটেছে বেশ দুরন্তপনায়৷ তাঁর শৈশব কেটেছে মেঠোপথের ধুলাবালি মেখে আর বৃষ্টির পানিতে ভিজে। মধুমতির ঘোলাজলে গাঁয়ের ছেলেদের সাথে সাঁতার কাটা, দৌঁড়ঝাপ, দলবেঁধে হা-ডুডু, ফুটবল, ভলিবল খেলায় তিনি ছিলেন দুষ্টু বালকদের নেতা। উল্লেখ্য যে, ফুটবল ছিল তাঁর প্রিয় খেলা। তিনি দোয়েল ও বাবুই পাখি খুব ভালবাসতেন। এছাড়া বাড়িতে ময়না ও শালিক পুষতেন। পাখি ও জীবজন্তুর প্রতি ছিল তাঁর গভীর মমতা। তিনি বোনদের নিয়ে বানর ও কুকুর পুষতেন।মাছরাঙা ডুব দিয়ে কিভাবে মাছ ধরে তিনি তাও খেয়াল করতেন খালের পাড়ে বসে বসে।
গ্রামের মাটি ও মানুষ তাকে প্রবলভাবে আকর্ষন করতো। সবাই চোখ বুজে বিশ্বাস করতো তাঁকে। বাড়ির মুরুব্বি, শিক্ষক, কৃষক, মাঝিভাই থেকে শুরু করে সকলের কাছেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রিয় এবং অন্যরকম। তিনি ছোট থেকেই ভীষণ পরোপকারী এবং অত্যন্ত উদার মনের। কারো দু:খ- কষ্ট দেখলেই এগিয়ে যেতেন তিনি। নিজের জামা খুলে অন্যের গায়ে পরিয়ে দেওয়া, খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়া এসব দেখে মুগ্ধ নয়নে সবাই তাঁর দিকে তাকাতো, দোওয়া করতো। এলাকায় একবার প্রাকৃতিক দূর্যোগ এর কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। ঘরে ঘরে খাবারের জন্য হাহাকার। মানুষের অনেক কষ্ট। দাদা দাদীকে বলে নিজেদের গোলা থেকে চাল বিলানো শুরু করেছিলেন তিনি। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল সংগ্রহ করে যাদের নেই তাদের কাছে পৌঁছে দিতেন। মানুষের জন্য কিছু করতে হবে, তিনি এই ভাবনাতেই থাকতেন সবসময়। তিনি সবার সঙ্গে মিশে যেতে পারতেন। কেউ তাঁর সান্নিধ্যে আসলে, তার ভক্ত হয়ে যেতো। তিনি মানুষদের নিয়ে এত ভাবতেন যে ব্রতচারী নামের এক সংগঠনে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। যেখানে ঢোল বাজিয়ে নাচ গান করে মানুষের দুঃখ দূর্দশা বর্ণনা করা হতো।
শেখ মুজিব ছোট থেকেই বেশ মেধাবী ছিলেন। বাবার কাছে পড়াশোনার হাতেখড়ি হওয়ার পর এবার তিনি গিয়ে পড়লেন গৃহ শিক্ষক মৌলভী সাখাওয়াত হোসেনের কাছে। তাঁর গৃ্হশিক্ষক একজন অত্যন্ত জ্ঞানী এবং মহৎ মানুষ ছিলেন। বলা যায়, শেখ মুজিব তাঁর শিক্ষকের অনেক গুণাবলী নিজের চরিত্রে ধারণ করেছিলেন। শেখ মুজিবকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ও কোন অংশে কম নয়।
শেখ মুজিবের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় সাত বছর বয়সে, ১৯২৭ সালে। ভর্তি হয়েছিলেন গিমাডাঙা এম.ই স্কুলে। যেটি তাঁর পূর্ব পুরুষরাই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখানে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছিলেন। স্কুলটি ছিল টুঙ্গিপাড়া থেকে প্রায় সোয়া কিলোমিটার দূরে। শুষ্ক মৌসুমে যেতে হত পায়ে হেঁটে এবং বর্ষাকালে যেতে হতো নৌকায় করে। একবার নৌকাডুবি হওয়ার ফলে তাঁর স্কুলে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। তখন তাঁর বাবা তাঁকে গোপালগঞ্জে, নিজের কর্মস্থলে নিয়ে যান। ১৯২৯ সালে, নয় বছর বয়সে তাঁকে গোপালগঞ্জের সীতানাথ একাডেমিতে (পাবলিক স্কুলে) তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয়। এখানে তিনি ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর তাঁর বাবার কর্মস্থল বদলি হওয়ায় তাকে সেখান থেকে মাদারীপুরে যেতে হয় বাবার সাথে। সেখানে ভর্তি হন ইসলামিয়া হাইস্কুলে।
এই সময় তিনি বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন।সেখানে আশানুরূপ চিকিৎসা না পাওয়ায় তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য। সেখানে বিখ্যাত চিকিৎসক শিবপদ ভট্টাচার্য এবং ডাক্তার এ.কে রায় এর চিকিৎসায় তিনি সুস্থতা লাভ করেন। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! সুস্থ হতে না হতেই তাঁর চোখে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। তিনি গ্লুকোমায় আক্রান্ত হন। এরপর কলকাতা মেডিকেল কলেজের চক্ষুবিশেষজ্ঞ ডা. টি আহমদ তাঁর চোখে অস্ত্রপাচারের মাধ্যমে তাঁকে সুস্থ করে তোলেন।তবে ডাক্তার তাঁকে চশমা পরতে বলেন। সেই সময় থেকেই চশমা তাঁর সারাজীবনের সঙ্গী হয়ে যায়। চিকিৎসক তাঁকে কিছুদিন পাঠদান থেকে বিরত থাকতে বলেন।
দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৩৭ সালে তিনি পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন। দীর্ঘ বিরতি থাকা সত্ত্বেও তাঁর পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ এতটুকুও কম ছিলনা। স্কুলে তাঁর সকলের সাথেই সখ্যতা গড়ে ওঠে। বয়সে বড় হওয়ায়, সহপাঠীরা তাঁকে মিয়াভাই এবং ভাইজান বলে ডাকতো। স্কুল জীবনেই শেখ মুজিব নিজেকে প্রগতিশীল কর্মী হিসেবে গড়ে তোলেন। মুজিব যখন নবম শ্রেণীর ছাত্র, সে সময় তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে এক ভাষণ দেওয়ার কারণে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এটিই ছিল তাঁর প্রথম গ্রেফতার। এরপর ছাত্রদের আন্দোলনের কারণে পুলিশ বাধ্য হয়ে তাঁকে ছেড়ে দেন। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু যখন মাথুরানাথ ইনিস্টিউট মিশনারি হাই স্কুলে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন, তখন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে.ফজলুল হক স্কুল পরিদর্শনে আসেন। তাঁর সাথে ছিলেন বিশিষ্ট্য রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। সে সময় তিনি শেরেবাংলার সামনে দাঁড়িয়ে স্কুলের ছাদ মেরামতের দাবী জানান। পরে তাঁর দাবী বাস্তবায়ন করতে বাধ্য হন এ.কে ফজলুল হক। অনুষ্ঠান শেষে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শেখ মুজিবের নাম ঠিকানা নেন এবং কলকাতায় তাঁর নিজের ঠিকানা মুজিবকে দেন।তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “”মুজিব তুমি এখানে মুসলমান ছেলেদের নিয়ে মুসলিম পরিষদ নামে একটা সংগঠন করে তোল।”” সেটাই ছিল শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনের হাতেখড়ি। তাও কিনা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কাছ থেকে!
তাঁর জীবনের আরো একটি বিশেষ ঘটনা না তুলে ধরলেই না। দুরন্তপনার বয়স না পেরুতেই সংসার জীবনে পা রাখতে হয়েছিল তাঁকে। বিয়ে হয় ফজিলাতুন্নেছা রেণুর সাথে। তাঁর স্ত্রী ছিলেন তারই আপন চাচাতো বোন। তাঁর বিয়ের সময় তাঁর বয়স ছিল দশ এবং তাঁর স্ত্রীর বয়স ছিল তিন বছর। মুজিব সারাজীবন তাঁর স্ত্রীকে রেণু নামেই সম্বোধন করেছিলেন। পরবর্তী জীবনে রেণু ছিলেন মুজিবের সবচেয়ে ভাল বন্ধু। এমন কোন আলোচনা ছিলনা যেটা তাঁরা দুজনে মিলে করতেন না।
ছোটবেলার প্রিয় বঙ্গবন্ধু বড় হয়েও ছোটদের ভীষণ ভালবাসতেন। কচিকাঁচার মেলা ও খেলাঘর ছিল তাঁর প্রিয় সংগঠন।কৈশরে আমাদের আজকের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভর্তি করে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর জীবনের অনেকটা সময় তিনি এই সংগঠনের সাথে কাটিয়েছেন। তাঁর জন্মদিনটি আমরা জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করি। তাই তো, শিশুদের কাছে এই দিনটি অনেক আনন্দের এবং প্রিয়।”
শিশুদের ইন্টারনেট আসক্তি ও তার প্রতিকার।
লেখাঃ সাদিয়া রহমান দৃষ্টি।
ইন্টারনেট হল বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেকগুলো নেটওয়ার্কের সমন্বিত ব্যবস্থা। এই ইন্টারনেট আমাদের জীবনকে করে দিয়েছে অনেক সহজ এবং পৃথিবীকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়।
আসক্তি শব্দটা তখন ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যখন তা আপনার জীবন যাপনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। অর্থাৎ আপনার দৈনন্দিন ও স্বাভাবিক কাজকর্ম এবং সম্পর্কগুলোর মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে।
এখন প্রশ্ন হল শিশুরা কেন এবং কিভাবে ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হচ্ছে?
কোন শিশুই মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ চালানো শিখে, অর্থাৎ ইন্টারনেটের জ্ঞান নিয়ে জন্মায়না। বরং বড় হওয়ার সাথে সাথে ইন্টারনেট ব্যবহার শিখে যায়।গবেষকদের মতে শিশুদের ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হওয়ার পেছনে মুখ্য ভূমিকা বাবা মায়ের। বাবা-মা নিজেরাই যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, চ্যাটিং এবং গেইমে ব্যস্ত থাকেন তখন শিশুদের কাছে এটাই স্বাভাবিক এবং আনন্দের জায়গা বলে মনে হয়। নিম্নবিত্ত, উচ্চবিত্ত উভয় জায়গা থেকেই শোনা যায়, মোবাইলের উমুক ফাংশান গুলো আমিই বের করতে পারিনা অথচ আমার ছেলে সব পারে। অর্থাৎ তারা এক্ষেত্রে গর্বিত হচ্ছেন। বাংলাদেশ মুঠোফোন এসোশিয়েশনের একটা জরিপ বলছে, ১-৫ বছরের প্রায় ৯০ শতাংশ শিশুই ইন্টারনেট আসক্ত। এই শিশুগুলোকে বাবা-মা তাড়াতাড়ি খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে কিংবা কান্না থামানোর জন্য হাতে তুলে দিচ্ছেন মোবাইল ফোন।এমনকি রান্নাবান্না, ঘরবাড়ি পরিস্কার, গৃহস্থালীর অন্যান্য কাজের সময় বা নিজেদের আড্ডার সময়ও তারা একই পন্থা অবলম্বন করছেন।আবার অনেক বাবা-মা নিরাপত্তাহীনতার জন্য বাচ্চাকে ঘরের ভিতরে রাখার প্রচেষ্টায় শিশুর হাতে তুলে দিচ্ছেন মোবাইল ফোন। অর্থাৎ তারা তাদের সন্তানের ভালো করতে গিয়ে শুধুমাত্র ভুল পন্থা অবলম্বন করার ফলে শিশুকে ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত করে তুলছেন। যা কিনা শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে বাঁধা প্রদান করছে। এর ফলে শিশুরা “নোমোফোবিয়া” নামক এক ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়াও ওজন বৃদ্ধি, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ, চোখ ও মাথা ব্যথা, অটিজম, এনজাইটি, ডিপ্রেশন, শুক্রানো হ্রাস ইত্যাদি রোগ তো বেড়েই চলেছে। চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ১-৫ বছর বয়সী শিশুদের চোখের সমস্যা গড় ৫ বছরে ৩-৪ গুণ বেড়েছে। এগুলো ছাড়াও অনেক শিশুতো আবার কথাই বলতে পারেনা। মনোযোগ দিয়ে কিছু শুনতে বা বুঝতে পারেনা। অন্যদের সাথে মিশতে পারেনা। এজন্যই বর্তমানে “Sppech and Language therapy centure” গুলোতে অধিক পরিমানে শিশুদের চিকিৎসা চলছে। শিশুদের এই ইন্টারনেট আসক্তি কাটানোর জন্য সম্প্রতি একটা গবেষণা চালিয়েছে “The Journal of the American Medical Association”. তারা জানায় শিশুদের ইন্টারনেট আসক্তি কমানোর ক্ষেত্রে বাবা-মা এর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ২ বছরের শিশুরা কথায় সাড়া দেয়, মনোযোগ দিয়ে শোনে, প্রথম অর্থবোধক শব্দ বলে। ৩-৫ বছরের শিশুরা নতুন কিছু শিখতে উপভোগ করে।বেশীক্ষণ কোন বিষয়ে মনোযোগ ধরে রাখার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
শিশুদেরকে ইন্টারনেট থেকে দূরে রাখার জন্য আপনাকে বেশ কিছু উদ্যোগ নিতে হবে।যেমনঃ
শিশুদের সাথে বেশী বেশী বথা বলুন এবং যতটা পারবেন সময় দিন। আপনার শিশুকে, অন্য শিশুদের সাথে মিশতে ও খেলতে দিন। মনে রাখবেন, খেলার সময় ঝগড়া বাঁধানোটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। তাই এটা নিয়ে বেশী ভাবতে যাবেন না।
যখন রান্না-বান্না বা গৃহস্থালির অন্যান্য কাজ করেবন, তখন শিশুকে পাশে বসিয়ে গল্প করুন। যেমন ধরুন, এপনি একটি আলু কাটছেন, তাকে সেটা দেখিয়ে বলুন, বাবু এটার নাম আলু। ইংরেজিতে বলে পটেটো।
শিশুকে ছোট ছোট ধাঁধা এবং অন্যান্য সহজ কিছু প্রশ্ন করুন, চিন্তা করার জন্য কিছুটা সময় দিন।তারপর নিজেই উত্তরটা জানিয়ে দিন। এতে করে তার প্রশ্ন করার এবং জানার আগ্রহ বাড়বে। সে যেই প্রশই করুক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন। জানা না থাকলে তার সামনেই জেনে নিয়ে তারপর উত্তর দিবেন।
খাওয়ার সময় ও ঘুমানোর সময় তাকে বই দেখে গল্প পড়ে শোনাবেন, তাহলে তার বইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরী হবে। প্রত্যেক মাসে বই কিনবেন। বাচ্চা ৩-৫ বছরের হলে, এমন বই কিনবেন যেন ৩-৫ লাইন দিয়েই এক পৃষ্টা ভরে যায় এবং অবশ্যই ছবি সংযুক্ত থাকে। মাঝে মাঝে বই কেনার সময় তাকেই পছন্দ করার অধিকার দিন।
শিশুকে নিজ নিজ ধর্ম সম্পর্কে শিক্ষা দিন। (মুসলিমরা) হযরত মুহাম্মদ (স) থেকে শুরু করে বিভিন্ন মনীষীদের জীবনীর অংশগুলো গল্পের মতো করে শুনাতে শুরু করুন। মুসলিমরা নামাজ পড়া শিখাবেন ছোট থেকেই। শুরুটা নাহয় ওঠা বসা দিয়েই হোক, ক্ষতি কি!
টবে গাছ লাগান এবং প্রতিদিন গাছের যত্ন নিন।এই পুরো সময়েই শিশুকে সামনে রাখবেন।
শিশুকে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাবেন। প্রকৃতির সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দিন। ফুল, পাখি, মাছ, সবজী সবকিছু চেনার জন্য তাকে সাহায্য করুন। ছবি আঁকতে উৎসাহ দিন। না পারলেও প্রশংসা করুন।
ছোট ছোট কিছু কাজ (যেমন আমাকে একটু কলমটা দাও তো বাবু) করে নিন এবং তার জন্য ছোট ছোট কিছু পুরস্কারের ব্যবস্থা করবেন।তা হতে পারে একটা চকলেট।
আপনি যদি এভাবে কিছু বিষয় মাথায় রাখেন এবং মেনে চলার চেষ্টা করেন অর্থাৎ পুরোপুরি সচেতন থাকেন তাহলেই আপনার শিশু ইন্টারনেটের ভয়াবহ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। এতে করে তার শারিরীক ও মানসিক বিকাশ সুস্থভাবে ঘটবে।