জীবন সরণি
কবির নাম : মাহফুজা আক্তার
দুর্গম গিরি কন্টকাকীর্ন জীবন সরণি
অতিক্রম করা নয়-রে সহজ মানুষের।
নির্ভীকচিত্তে অধঃপতন হয় মানুষ্যহীনতা
বঙ্কিম সিঁড়ি বেয়ে সাফল্য অর্জন অমসৃণ ।
স্বাচ্ছন্দেও বহু সম্ভ্রান্ত ধ্বংস হয়েছে
মহাকালের ঐ তীব্র স্রোতের সান্নিধ্যে ।
সায়রে-পাথারে শৈবাল গুলো নির্ভীক সেনা
শৃঙ্খল হয়ে সরণিতে তারা সম্ভ্রান্ত ।
ভক্ষনকারী নিরলস তার নিদ্রা কালে
হিসেবের খাতা মেলে না তার নির্ভয়ে ।
পৃথিবীর বুকে এসেছিল যত মহাপুরুষ
যুগে যুগে ছিলো সৎ ও মহৎ সসময়ে ।
সময়নিষ্ঠা, শিষ্টাচারের নিয়মানুসারে
জীবন সরণি পদার্পণের ধাপে অর্জিত ।
কল্যাণপূত কর্মজীবনে মানুষ্যের তরে
সদা নিয়োজিত হও আগুয়ান অনায়াসে ।
অধ্যবসায়ে পিঁপড়া গুলোও আজ সাফল্য
ছোট্ট হলেও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ।
সৎ সঙ্গীর নির্বাচন করো এই পৃথিবীতে
তাড়াও তোমরা জীবনের সকল জঞ্জাল ।”
একটি অপ্রত্যাশিত রাত
কলমেঃমাহফুজা আক্তারঅর্থী ও অথৈ দুই বোন। অর্থী,অথৈ এর চেয়ে পাঁচ বছরের বড়। রাতে শুয়ে দু’জনে গল্প করছে। এমন সময় গুড়ুম গুড়ুম মেঘের গর্জনে ঘরটা কেঁপে ওঠে। শুরু হলো অঝোরে বৃষ্টি। বিদ্যুৎ চমকানো আর বৃষ্টির সাথে যুক্ত হলো তুমুল ঝড়। সব মিলিয়ে ভয়ংকর পরিবেশের সৃষ্টি হলো। অর্থীর আব্বু -আম্মু এসে অনেকক্ষণ ধরে গল্প করলো। রাত গভীর হতে থাকলে অর্থীর আব্বু জিজ্ঞেস করল,””মামনী, তোমাদের ভয় করছে না তো?””অর্থীও উত্তর দিল, “”না,আব্বু। তুমি গিয়ে ঘুমাও। টেনশন করো না। আমরা থাকতে পারবো।”” তার আব্বু চলে যাওয়ার সময় বললো,আজ ভুল করেও আম কুড়াতে যেওনা। অনেক ঝড় হচ্ছে, বলা তো যায় না কখন কি হয়। যদি একটা গাছ ভেঙে মাথার উপরে পড়ে। তখন কি হবে?দু’জনেই বললো, “”না,আব্বু। আমরা আর আম কুড়াতে যাব না। তুমি গিয়ে ঘুমাও। “” অর্থীর আব্বু বিদায় জানিয়ে চলে গেল।কিছুক্ষন পরপর ঝড়ের বেগ বেড়ে যাচ্ছে। কিছুতেই ওদের ঘুম আসছে না। দু’জনে গল্প করছে তো করছেই। এ গল্প যেন শেষ হওয়ার নয়। আজ সারা দিন কে কি কাজ করছে সব বলছে আর হাসছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি থেমে গেছে কিন্তু এখনো থামে নি। রাত কয়টা বাজে সেদিকে কারোও খেয়াল নেই। একটু আগে ভীষণ ঝড় হয়ে গেল। তাদের বাবা নিষেধ করেছে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। অথৈ বলছে, “”আপু চল ঘুম আসছে না,চল না আম কুড়াতে যাই। আজ অনেক আম পাওয়া যাবে।”” অর্থী কিছুতেই রাজি হলো না। তবুও অথৈ বলেই যাচ্ছে। ঠিক সেই মুহূর্তে কেউ ফিস ফিস করে ডাকছে, “”অর্থী,এই অথৈ, আম কুড়াতে যাবি না?তাড়াতাড়ি আয় সকাল হয়ে গেল।”” দু’জন দ্রুত উঠে দরজা খুলে দেখল ইরা।সবার আগে যাচ্ছে ইরা।ইরা ওদের চাচাতো বোন।
কিরে আয়, এত ধীরে হাটছিস কেন? আমারা তো দ্রুতই আসছি, তুই আজ এত দ্রুত কিভাবে যাচ্ছিস?
আরে বুঝতে পারছিস না? সকাল হয়ে যাচ্ছে অন্যেরা সব আম কুড়িয়ে নিয়ে যাবে।
এখনও বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বাইরে শীতল হাওয়া বইছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি বৃষ্টি এল।নিবু নিবু আলোতে রাস্তাটাও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। আজ টর্চ লাইটও আনতে ভুলে গেছে। ভয়ে অর্থী ও অথৈ এর গা ছমছম করছে কিন্তু ওরা ইরাকে সেটা বুঝতে দিচ্ছে না। দু’জনেই এবার আরও দ্রুত হাটছে কিন্তু ইরার সাথে সাথে যেতে পারছে না। ইরা ওদের থেকে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে।
অর্থী ইরাকে বলছে, “”ইরা,এই ইরা। আজ আমরা কোথায় আম কুড়াতে যাচ্ছি? “”
ইরা বললো,””চৌধুরী বাড়ির বড় আম বাগানে। দ্রুত আয়।””
এবার অর্থী ও অথৈ দৌড়াতে শুরু করলো। দৌড়াতে দৌড়াতে ওরা হাঁপিয়ে উঠলো। অথৈ বললো,””অর্থী, আপু, চল বাড়ি ফিরে যাই।আজ আর আম কুড়াতে যাব না।ঐ বাগানে পৌঁছানোর আগেই সকাল হয়ে যাবে।তখন আর আম কুড়ানো হবে না।””
অর্থী অথৈকে ধমক দিয়ে বললো,””এত দূর এসে এখন চলে যাব? সকাল হলে হবে তবুও চল, আজ আম কুড়াবোই।””
গল্প করতে করতে তিনজন বাগানে পৌছে গেল। বড় পুকুরটা পেরুলেই আম বাগান। ইরা চেচিয়ে বললো -দেখ অর্থী, কত সুন্দর আম। সবাইআম কুড়ানো শুরু করলো। আম কুড়াতে কুড়াতে অর্থী আর অথৈ হাঁপিয়ে উঠলো। অনেক আম কুড়িয়েছে তারা কিন্তু ইরা আম কুড়িয়েই যাচ্ছে। অর্থী ইরাকে বলছে, “”এই ইরা, আমরা এত আম কীভাবে বাড়িতে নিয়ে যাব? চল আজ আর আম কুড়াবো না।”” ইরা, নাছোড় বান্দা। ইরা আম কুড়াচ্ছেই। আজ ইরাকে অন্য রকম লাগছে। অর্থী চিন্তায় পড়ে গেল। ইরার ডাকে অর্থীর ভাবনায় ছেদ পড়লো। অর্থী হাতের দিকে তাকাতেই হাত ঘড়িটা দেখলো। এখন রাত ৩ঃ৪০ মিনিট। অর্থী যেন অজানা এক আতংকে শিউরে উঠলো, গায়ের লোম কাটা দিয়ে উঠলো। হঠাৎ অর্থীর মনে পড়লো ইরা তো ২ বছর আগে বিষ খেয়ে আত্নহত্যা করেছিল। তাহলে এ কে? অর্থী মাটিতে বসে ইরার পায়ের নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো, ইরার পা দু’টো মাটি থেকে একটু উপরে। ইরা হাওয়ার উপরে ভাসছে। অর্থী ভূত বলে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল।এতক্ষণে অথৈও বুঝে গেছে এ তাদের চাচাতো বোন ইরার আত্মা। ও তো এখন ভূত হয়ে গেছে। অর্থীর জ্ঞান ফিরে এলে ইরাও তার ভূতের কারিশমা দেখাতে শুরু করলো। ইরা এ গাছে ও গাছে উঠছে, বড় বড় ডাল ভেঙে মাটিতে ফেলে দিচ্ছে আর বলছে যত খুশি আম কুড়া।আজ সারা রাত আম কুড়াবো। এভাবে আর কোন দিন আম কুড়াতে পারবি না, অর্থী। পুনরায় আরম্ভ হলো ঝড়-বৃষ্টি, মেঘের গর্জন। অথৈ ভয়ে অর্থীকে জড়িয়ে ধরলো। দু’জনের হাত-পা শীতল হয়ে গেছে। এখন যেন ওরা আর নড়াচড়া করতে পারছে না।
অর্থী আপু,আমি তোমাকে তখনই বললাম চল চলে যাই আজ আম কুড়াবো না তুমি শুনলেই না। এখন আমাদের কি হবে?ইরা আপু, তুমি আমাদের আর ভয় দেখিও না। আমরা ভয়েই মারা যাব। তুমি চলে যাও, প্লিজ। আমরা তো তোমার কোন ক্ষতি করি নাই। তাহলে তুমি আমাদের সাথে কেন এমন করছো? বলেই অথৈ কান্না শুরু করে দিল।
অর্থী এখন কি করবে বুঝতে পারছে না। তবুও বললো, “”ইরা,তুই আমাদের সাথে এমন করলি কেন?কেন আমাদের বিপদে ফেললি,বল?””
ইরা বললো, “”এতেই তো আমি আনন্দ পাই। মানুষের কষ্টে আমি সুখ খুঁজে পাই। তোরা তো জানিস না এখন আমি কত খুশি।তারপর -হা-হা-হি-হি করে হাসতে শুরু করলো। “”
অথৈ ও অর্থী আয়াতুল কুরছি পাঠ করতে করতে জ্ঞান হারালো।”