সুন্দর অসুন্দরের পার্থক্যঃ
সুন্দর আর অসুন্দরের মাঝে পার্থক্য খোঁজার দায়িত্ব পেয়েছিলাম, একদিন এক গোধূলি লগ্নে। হাতে ছিলো তখন কালো রঙের খামে বিষণ্ণতার এক অদ্ভুত চিঠি।
যে চিঠিতে গোটা গোটা অক্ষরে লিখতে হবে আমাকে, সুন্দর অসুন্দরের পার্থক্য। আমি তখন নিঃসাড়। জীবনের শুরু থেকে ছুটেছি কেবল সুন্দরের পিছু।
বয়স যখন সাত, ঠিক তখুনি মাদ্রাসার মেঝেতে বসে, সারা গায়ে চকের গুঁড়ো মেখে, চিৎকার করতে করতে আড়চোখে দেখতাম কোন একজন মানুষকে। সত্য,সে মানুষটা সুন্দরই ছিলো বটে। তারপর, কি হয়েছে আর মনে নেই। কিন্তু স্পষ্ট খেয়াল আছে, আমার ডাকনামটা হয়ে গেছে তার নামটা……..
তারপর, সময় ফেরিয়ে গেছে।
মাদ্রাসা ছাড়লাম। আর দ্বিতীয় বার আঁছড়ে পড়লাম ফাল্গুনীর কাছে। উফ! সে কি এক ভালো লাগা। অদ্ভুত কতগুলী কবিতা লিখা। সুন্দর থেকে সুন্দরী। অপরূপ থেকে মায়াবী। পরী থেকে রাজকুমারী। সুন্দর বলে তখনো ক্ষান্ত আমি।সত্যি, অসুন্দরকে কখনো পরখ করিনি। অসুন্দরের ভেতর যে সুন্দরের বাস, তা কেবল গল্পের পাতায় লিখা হতো, তাকে বাস্তবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করিনি। জানিনা, প্রতিটি মানুষ কেন চায়, সুন্দর মানুষ? কেন খোঁজে না তারা অসুন্দরের ভেতর সুন্দর মানুষকে। অবশ্য, কার কথা বলি, আমি নিজেওতো সেই মানুষের একাংশ জুড়ে। আমরা যৌবনের সময়টাতে এমনি হাহাকার করি। কিন্তু শেষ অবধি…..কোন একটা মানুষ পেলেই চলে। জীবনতো একটাই। কোনমতে ফেরিয়ে যাক না।
সময় ফেরিয়ে গেছো আরো।
ফাল্গুনীকে এক বন্ধুর কাছে সিটকে পেলেছি সেই কবে। তারপর, থেকেই উদাসীন। সুন্দর আর অসুন্দরের পার্থক্য খোঁজা। চুপিচুপি। কোন এক সুন্দর মানুষের দখল থেকে।
এক বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা বলি।
সুন্দর এক মানুষের দিকে আমার দৃষ্টি। কিন্তু সেই দৃষ্টিকে এপারওপার করে, বুঝতে পেরেছি, অন্য এক মানুষের আমার প্রতি দৃষ্টি। আমি আড়চোখে তাকালাম, অসুন্দর বটে।
লাল শাড়ী পরা।
চোখ দুটো চিত্রা হরিণীর ন্যায়। বাকিটা আর পরখ করিনি। আমি দূরে সরে দাঁড়ালাম। মেয়েটা তখনো আমাকে দেখছে। জানিনা, কিসের ভয় ছিলো….অসুন্দর? না,না তা নয়। লাজুকতাই ছিলো বরঞ্চ। হঠাৎ, মেয়েটা আচমকা আমার সামনে এসে দাঁড়ায়। কাঁপা স্বরে প্রশ্ন করে, কেমন আছেন?
আমি উত্তর করি, জ্বী, ভালো।
কি করেন এখন?
ঐ তো পড়া নিয়েই ব্যস্ত। কিন্তু আপনাকে যে চিনলাম না?
না, চেনারই কথা! ঠিক, এগারো বছর আগে, আমার মতো মানুষটাকে দেখার কোন প্রশ্নই আসেনা। আমি শারমিন। আপনার প্রাইমারী স্কুলের ক্লাসমেট। সামনে থেকে পেছনের সারিতে বসতাম। ঠিক আপনার ব্যঞ্চের অপর পাশে। আপনাকে দেখতাম সবসময়। কিন্তু আপনি তাকাতেন না কখনো! ফাল্গুনীর প্রেমিক ছিলেন, তাই বটে।
আমি চুপ করে রইলাম। ও জায়গা থেকে দূরে যেতে চাইলাম। কারণ, আমিও যে প্রতিটা মানুষের মতো গাধা, সুন্দরের পেছনে ছুটি কেবল, অসুন্দরের ভেতর সুন্দর মানুষটাকে পরখ করিনা।
বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হয়।
আমি গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে। গাড়ি ছড়বো। হঠাৎ, সে ফের এসে দাঁড়ায় সামনে। আমি দূরে সরি। ভাবি, আমার প্রতি কেন তার এতো অভিলাষ?
আমিতো সুন্দর না।
তবে তো সেই সত্যিকারের প্রেমিক, সে অসুন্দরকে এতটা বছর পরও চিনতে পেরেছে। নিজেকে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছে।
আচ্ছা, একদিন বিকালে আমাদের ওদিকে আসবেন?
আমি মাথা নাড়িয়ে বলি, না। আমি ব্যস্ত মানুষ।”